প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তাঁরা একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে কাজ করছেন, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন প্রদান করে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠান ও ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদনের বাস্তবায়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি। সংস্কার এজেন্ডার পাশাপাশি আমরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার কাজও চালিয়ে যাচ্ছি। ন্যায়বিচারের আরও অর্থ হলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যাতে আর কখনও জনগণকে দমন-পীড়নের জন্য ব্যবহার না করা হয়, তা নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, তাদের লক্ষ্য এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যেখানে সকল বাংলাদেশি শান্তি, গর্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারবে। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘স্মরণ ও সংলাপ অনুষ্ঠানে’ বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার মিশন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক সমাজের সদস্য, যুব প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক অংশীদাররা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি। আমাদের সংস্কার এজেন্ডার পাশাপাশি, আমরা আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য কাজ করছি। তিনি বলেন, ন্যায়বিচার কেবল শাস্তির বিষয় নয়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যেন আর কখনও তার নিজস্ব জনগণকে দমন বা ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করা না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তাদের আত্মত্যাগ আমাদের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের পথ খুলে দিয়েছে। তারা একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরির রাস্তা তৈরি করেছে, যা আশা, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে প্রোথিত।
প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের ঘটনাবলীর একটি স্বাধীন তথ্য অনুসন্ধান মিশন পরিচালনা করে। গত ১২ ফেব্রুয়ারী প্রকাশিত মিশনের প্রতিবেদনে তাদের অনুসন্ধান উপস্থাপন করা হয় এবং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে নৃশংসতার বিস্ময়কর মাত্রা প্রকাশ করা হয়। জুলাই বিপ্লবে মাত্র কয়েক সপ্তাহে আনুমানিক ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা হাই কমিশনারের কার্যালয়ের কাছে কৃতজ্ঞ যে তারা কেবল আইনের এই অপব্যবহারগুলি নথিভুক্ত করেনি, বরং এই ধরনের লঙ্ঘন যাতে আর কখনও না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য একটি বিস্তৃত সুপারিশ প্রদান করেছে। তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের নাগরিকদের মানবাধিকার বারবার অস্বীকার করা হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল। সহিংসতা শাসনের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল। গত বছরের জুলাই মাসে আমাদের সমাজ এই বাস্তবতা প্রত্যাখ্যান করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণ অপরিসীম সাহসিকতার সাথে তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা বলপূর্বক গুম থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য কাজ করছি। ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করেছি। আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগদান করেছি। এই মাসের শুরুতে, আমরা ঢাকায় একটি সহায়তাকারী মিশন প্রতিষ্ঠার জন্য ওএইচসিএইচআর-এর সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। এই মিশন সংস্কার উদ্যোগের জন্য কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। সেইসাথে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করা সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং নাগরিক সমাজের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।